১৬ নভেম্বর ২০২১
হাইড্রোফয়েল দিয়ে চলবে গাড়ি
পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, হাইব্রিড এমনকি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে বাংলাদেশে। চট্টগ্রামে এবার জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহার করে গাড়ি চালানোর যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু হাইড্রোফয়েল গাড়ি আমদানি এবং ব্যবহারের উদ্যোগ দেশে এই প্রথম।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রকল্পের আওতায় আগামী বছরের জুন থেকে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য এই জ্বালানি উৎপাদনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গৃহস্থালি আবর্জনা ও পানিকে যথাক্রমে বায়োমাস গ্যাসিফিকেশন এবং তড়িৎ বিশ্লেষণ (ইলেক্ট্রোলাইসিস) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানিতে রূপান্তর করা হবে। এর জন্য বিসিএসআইআর ইতোমধ্যে একটি ইউনিট স্থাপন করেছে। আরেকটি ইউনিট স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। ইউনিট দুটি উৎপাদন শুরু করলে দৈনিক ৫ কেজি ৮০০ গ্রাম হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদিত হবে। ২৪ ঘণ্টা চালানো হলে উৎপাদন ২৯ কেজিতে পৌঁছাতে পারে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বিসিএসআইআর ৫৪ কোটি টাকার একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই প্রকল্পের উদ্বোধন হয়।
বাংলাদেশে যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল পরিশোধন, ইস্পাত, মিথানল, ইলেকট্রনিক্স ও খাদ্যশিল্প খাতে হাইড্রোজেনের চাহিদা বাড়ছে।
হাইড্রোজেন জ্বালানি ভবিষ্যতে দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, এ জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পানি ও বায়োমাস দুটোই বাংলাদেশে সহজলভ্য। এই প্রকল্পের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। বাংলাদেশের প্রথম হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র, সরকার এই খাতে গবেষণার ওপর বেশি জোর দিবে বলে সবার ধারণা।
বাংলাদেশে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও নবায়নযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উন্নত দেশ গড়ার গবেষণার অংশ হিসেবে গাড়িটি প্রকল্পের আওতায় সরকারিভাবে কেনা হয়েছে। গাড়িটি বিসিএসআইআরের চট্টগ্রাম ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছে।
ল্যাবে উৎপাদিত হাইড্রোফয়েল (জ্বালানি) দিয়েই গাড়িটি চালানো হয়। নিরবচ্ছিন্ন চলাচলের জন্য একটি ফুয়েল পাম্প স্থাপন করা হবে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে।
বিসিএসআইআর প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুস সালাম আরটিভি নিউজকে বলেন, হাইড্রোজেন জ্বালানি সার্বিকভাবে বিদ্যুতের নিরাপত্তা, বাড়তি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ এবং জাতীয় অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্বের ২৪টি দেশ এখন হাইড্রোফয়েল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের ২৫তম দেশ হিসেবে সেই উন্নত দেশগুলোর কাতারে উঠে আসা স্বাধীনতার ৫০ বছরে অন্যতম অর্জন। প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা যে পিছিয়ে নেই, এটিই জানলো বিশ্ব।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমি গাছের ডালসহ ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট থেকেই এই হাইড্রোজেন জ্বালানি তৈরি করেছি। এই জ্বালানি দিয়ে গাড়িটি প্রথম দিন ক্যাম্পাসে চালানো হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে যে ফুয়েল পাম্প করব সেই হাইড্রোজেন তৈরি হবে পানি থেকে। তখন থেকে গাড়িটি নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে পারব। এরপর আমি রান্নাঘরের কিচেন কম্পোস্ট থেকেই তৈরি করব হাইড্রোফয়েল। মূলত আমি দেখব দেশের কোনো সহজলভ্য পণ্য থেকে বেশি পরিমাণে হাইড্রোফয়েল তৈরি হবে।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ হাইড্রোফয়েল ব্যবহারে জোর দিয়েছে। জাপান ও কোরিয়া ২০২৫ সালের মধ্যে গাড়ির বড় একটি অংশ হাইড্রোফয়েলে চালানো নিশ্চিত করতে চায়।
পাশের দেশ ভারতে ২০২০ সালে একটি হাইড্রোফয়েল গাড়ি পরীক্ষামূলক চালানো হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশও এগিয়ে গেল।